টপ নিউজবিনোদনসমাজ ও সংস্কৃতি

১৪ই ফেব্রুয়ারী বিশ্ব ভালবাসা দিবস উদযাপনের ইতিহাস

১৪ই ফেব্রুয়ারী বিশ্ব ভালবাসা দিবস বা দ্যা ভ্যালেন্টাইনস-ডে।এই বিশ্ব-ভালবাসা দিবস সারা বিশ্বে একসাথে উদযাপন করা হয়।বিশ্ব-ভালবাসা দিবসটিকে কেন্দ্র করে সারা বিশ্ব হয়ে উঠে আন্দদে আত্নহারা উন্মাতাল।নানান রকম ফ্যাশনের উপহারে ছেয়ে যায় শহরের ও গ্রামের মার্কেট।হটেল, রেস্তোরাঁগুলোকে সাজানো হয় নতুন রুপে।সমস্ত পার্কগুলোকে সাজানো হয় যুবক-যুবতীদের চাহিদামত করে।১৪ই ফেব্রুয়ারীতে প্রেমিক-প্রেমিকাদের চোখে মুখে ভেসে উঠে যৌন উত্তেজনা।তারা একসাথে গ্রাম ও শহরের রাস্তায় নেমে প্রিয়-মানুষের জন্য ছড়িয়ে দেয় ভালবাসার সাত রং। এই দিনে তরুণ-তরুণীদের অসভ্য, বেহায়ে আচার-ব্যবহার দেখে ঈবলিশ শয়তানও লজ্জিত হয়।আর এগুলো হয় সব বিশ্ব-ভালবাসা দিবস, সংস্কৃতি ও সভ্যতার নামে।

সারা বিশ্বের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে ৯৩% মুসলমানের দেশে, মসজিদের শহরে, রাজধানী ঢাকা সহ। দেশের প্রায় সব শহর বন্দরে, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় এবং পার্কের আনাচা-কানাচে চলে এ অসভ্যতা।কারণ আন্তর্জাতিক পাওয়ার মুসলমান গোষ্ঠীর চরিত্রহীন করার জন্য।যুব-সমাজকে ধংস করার জন্য বিভিন্ন ধরনের আয়োজন করে। বিপদগামী করে দেশের যুবকদের।অন্যায়ের পথে ঠেলে দেয় এই বেহায়ে বিশ্ব-ভালবাসা দিবসটি।বিশেষ করে বাংলাদেশের এক নিম্ন শ্রেণির মুসলিম মানুষেরা এই দেশে নতুন এক প্রকার সংস্কৃতির সৃষ্টি করিতেছে।তারা এক নতুন সংস্কৃতি নামে বিশ্ব-ভালবাসা দিবস হিসেবে পালন করা শুরু করছে।

১৪ই ফেব্রুয়ারী বিশ্ব ভালবাসা দিবস হিসেবে মুসলমানদের মতামতঃ

মুসলমানরা বলে থাকেন যে, এই বিশ্ব-ভালবাসা দিবস হিসেবে মুসলমানদের কোন দিবস নয়।বিশ্ব ইতিহাস থেকে জানা যায় যে, প্যাগাম্বার যীশু খ্রিস্টের প্রায় জন্মের ১৪০০ শত আগে পৌত্তলিক অথার্থ মূর্তি পূজারীদের সমাজে বিভিন্ন ধরণের অপসংস্কৃতি প্রচলিত ছিল।তারা বিভিন্ন ধরনের দেব-দেবতাকে সৃষ্টিকর্তা হিসেবে পূজা করতো।মূর্তিপূজারীদের মতে তাদের বিভিন্ন ধরণের দেব-দেবতা ছিল।যেমন, পশু-পাখিদের জন্য একটা দেবতা আছে বলে মনে করত। জমির ফসল দেয় এর জন্য দেবতা আছে বলে তারা কল্পনা করত।

তাদের বিভিন্ন ধরণের দেবতাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় দেবতাকে লুপারকালিয়া নামে ডাকা হতো। এই দেবতার সামনে প্রতি বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে তারা অনুষ্ঠান পালন করত। এই অনুষ্টানের একটি বড় কর্মসূচি হল, নব যুবতীদের নামে লটারি করা।এই লটারিতে যে যুবতীর নাম উঠতো সেই যুবতীতে এবং আরেকটি যুবককে আগামী এক বছরের এই দিন পর্যন্ত যুবতীর যৌবন ভোগের কর্তা বানানো হত।অর্থাৎ লটারির মাধ্যমে যুবক ও যুবতীদের মধ্যে তাদের যৌবন ভোগের জন্য বণ্টন করে দেওয়া হতো।এবং সেই গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্টানে সেই লুপারকালিয়া নামে দেবতার জন্য একটি পশু উৎসর্গ করা হত।

অর্থাথ উৎ্র্গকৃত পশুটি যদি ছাগল (পাঠা) হয় তাহলে ছাগলের গায়ের চামড়া লটারিতে বাছাইকৃত যুবতীর গায়ে জড়িয়ে দেওয়া হতো।তারপর ছাগলের জবাইকৃত রক্ত এবং কুকুরের জবাইকৃত রক্তে রঞ্জিত একটি চামড়ার চাবুক যুবককে দেওয়া হতো।এবং সেই যুবকের হাতের চাবুক দিয়ে ‍ছাগলের চামড়া গায়ে ‍যুবতীকে নিষ্ঠুরভাবে চাবুক মারা হত।এই চাবুক মারার কারণে সেই সমাজের মানুষেরা মনে করতো যে চাবুক মারার পর থেকে যুবতী সন্তান জন্ম দেওয়ার উপযুক্ত হবে।এই অনুষ্টানের তারিখ ছিল ১৪ই ফেব্রুয়ারী।

বিশ্ব-ভালবাসা দিবস সম্পর্কে খ্রিস্টধর্ম অনুসারীদের মতামত

কালক্রমে আবির্ভূত হয় খ্রিস্টধর্ম। খ্রিস্টধর্ম হলো আহলে কিতাবের ধর্ম, ইঞ্জিল।খ্রিস্টধর্ম আনুসারীদের মতে পৌত্তলিক কুসংস্কারকে আসমানী ধর্ম হিসেবে খ্রিস্টধর্ম অনুসারীরা সমর্থন করতেন না।ফলে তারা এই লটারির প্রথা কে গ্রহন করতে পারেননি। তাই তারা এই লটারি প্রথার বিরুদ্ধে আন্দলন গড়ে তুলনেন  তবুও এই প্রথাকে রোধ করতে পারলেন না। তখন তারা এ অনুষ্টানটিকে বিশুদ্ধ করার জন্য তারা বলল যে, আগে অনুষ্টানটি পালন করা হত দেবতার নামে কিন্তু এখন পালন করা হবে পাদ্রীর নামে।যুবতীর নামে লটারী প্রথা বন্ধ করে পাদ্রীর নামে লটারি দেওয়া হত, যে যুবকের ভাগে যে পাদ্রীর নাম আসবে সে যুবক সেই পাদ্রীর সংস্পর্শে থাকবে আবার লটারির এই দিন না আসা পর্যন্ত।আগে যুবতীকে লটারির মাধ্যমে যুবকদের মাঝে বণ্টন করা হতো। আর এবার যুবতী লটারীর প্রথাকে বিশুদ্ধ করার জন্য পাদ্রীর সংস্পর্শে যুবককে দেওয়া হতো।

৪৭৬ সালে দিবসটির নাম পরিবর্তন করার দরকার বলে জানিয়েছেন পোপ জেলিয়াস।আগে ছিল একজন দেবতার নামে, এটা পরিবর্তন করে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামে একজন যাজকের নামে দিবসটি পালন করা হোক।পরবর্তিতে ৪৯৬ সালে ইংরেজিতে এ দিবসটির নাম করা হয় “ভ্যালেন্টাইনস ডে”।তবে খ্রিস্টানদের ইতিহাসে জানা যায় যে, সেই সময়ে ভ্যালেন্টাইন নামে প্রায় ৫০ জনের মত ব্যক্তির নাম পাওয়া যায়।এবং তাদের মধ্যে অত্যন্ত দুইজন বিখ্যাত ব্যক্তি ছিলেন। একজন ভ্যালেন্টাইনকে রোমান দেশের রাজা জেলবন্দি করে রেখেছিলেন।তিনি অন্তরীণ হওয়ার পর সেই জেলখানার প্রধান রক্ষকের একমাত্র মেয়ের প্রেমে পড়েন।মেয়েটির সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলে মনের ভাব বিনিময় করতেন।জেলবন্দি ভ্যালেন্টাইন সেই জেলখানাতেই তার মৃত্যু হয় এবং মৃত্যুর হওয়ার পূর্বেই তিনি একটি চিঠি লিখে যান।এজন্য সেই খ্রিস্টান সমাজে প্রেমিকদের ভ্যালেন্টাইন যাজক হিসেবে পরিচিতি তুলে ধরেন।রোমান রাজার জেলখানার প্রধান রক্ষকের একমাত্র মেয়ের প্রেমিক যাজক ভ্যালেন্টাইন ১৪ই ফেব্রুয়ারীতে মারা যাওয়ার পর তার মৃত্যুদিবস হিসেবে ১৪ই ফেব্রুয়ারীতে পালন করা হয়।আর তখন থেকেই ১৪ই ফেব্রুয়ারীকে ভ্যালেন্টাইন ডে বলে নাম রাখা হয়।

বিশ্ব ভালবাসা সম্পর্কে মুসলমানদের অভিমতঃ

মুসলিম বিষজ্ঞরা জানিয়েছেন যে, ভ্যালেন্টাইনস দিবসের অতীত ইতিহাস জানার পর কোন সুস্থ্য মস্তিষ্কের মুসলিম যুবক-যুবতী এ দিবসটি উদযাপন করতে পারে না।কারন এই দিবসটির মাঝে কুসংস্কার, দেবতার নাম জড়িত রয়েছে।যে দিবসের সাথে মুসলমানদের ঈমান বিরোধী কার্যকলাপ যুক্ত সেই দিবস মুসলিমরা কিভাবে পালন করতে পারে তা মুসলিম সমাজের বোধগম্য হতে পারে না।

মুসলিমদের কে তার সৃস্টিকর্তাকে স্মরণ করতে হবে্ এবং তাকে মেনে চলতে হবে। মুসলিমদের সৃস্টিকর্তার ঘোষণা যা তিনি প্রদান করেছেন তার নিজেস্ব কিতাবে, সূরা বনী ইসরাঈল-৩২ “তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেও না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ”

১৪ই ফেব্রুয়ারী বিশ্ব ভালবাসা বা প্রেমের ধরন যেমন হওয়া উচিৎঃ

সন্তানের প্রেম তার মা-বাবার সাথে, সহোদর ভাইবোনের প্রেম, নিজেস্ব স্বামী ও সন্তানের প্রেম, মানবতার প্রেমই হতে পারে একমাত্র পবিত্র প্রেম।তাছাড়া অন্য ছেলে-মেয়ে, যুবক-যুবতী, বন্ধু-বান্ধবী, ছাত্র-ছাত্রীদের বিবাহ পূর্বে পবিত্র প্রেম হতে পারে না।এটা অন্যায় এটা সব ধর্মেরী ধর্মীয় বিরোধী কাজ।এই প্রেমের নামে অসভ্য খেলনার জন্য যুব সমাজ ধংসের মুখে পতিত হয়েছে।আবার কোন কোন জায়গায় প্রেমিক খুন করছে তার প্রেমিকাকে। এসিডে ঝলসে দিচ্ছে প্রেম প্রত্যাহারের কারণে অনেক যুবক-যুবতীকে।

বিশ্ব-ভালবাসা দিবস ১৪ই ফেব্রুয়ারী ২
বিশ্ব-ভালবাসা দিবস ১৪ই ফেব্রুয়ারী

কিন্তু আমাদের জাতির এই করুন অবস্থা দেখেও কোন প্রতিরোধ ব্যাবস্থা গ্রহন করে না।বরং তারা বিশ্ব-ভালবাসা দিবস নামে যে বেহায়া দিবস সম্পর্কে লেখা-লেখিতে, বক্তব্য-বিবৃতিতে বিশ্ব-ভালবাসা দিবস নামে নুংরা দিবসকে উস্কানি দিচ্ছে। আসলে এরা মানবতার শত্রু, সংস্কৃতির দুশমন।যদিও এই দিবসটি অনেক বছর ধরে পালিত হয়ে আসলেও আমাদের দেশে কিন্তু ছড়িয়েছে অনেক বছর পরে।

১৪ই ফেব্রুয়ারী বিশ্ব ভালবাসা দিবসটি যেভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠলো

প্রায় ১৯৯৩ সালে কোন এক পত্রিকায় বাঙালিদের একটি নতুন দিবস ’বিশ্ব-ভালবাসা দিবস’ নামে প্রকাশ করে পরিচয় করিয়ে দেয় রফিক (ছদ্ম নাম) সাংবাদিক। তবে রফিক সাহেব একটু চালাকি করে দিবসটিকে ভ্যালেন্টাইনস ডে নাম না দিয়ে ’বিশ্ব-ভালবাসা দিবস’ নামে প্রকাশ করেন।এই রফিক সাহেবের দেখা-দেখি অন্যান্য পত্রিকাগুলোও দিবসটিকে নিয়ে নানান ধরনের আয়োজন করে।ফলে বাংলাদেশের তরুন-তরুনী, যুবক-যুবতীদের মধ্যে ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠে ভালবাসা দিবসটি।বিশ্ব-ভালবাসা দিবসটি যদিও পাশ্চাত্যের অন্ধ অনুসরণ, যদিও মুসলিম সংস্কৃতির সংঙ্গে মিল নেই যা সম্পূর্ণ আদালা হওয়ায় সাথে বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গেও মিল নেই।তবুও আমাদের কতিপয় সোস্যাল মিডিয়া বা টিভি মিডিয়াগুলো তরুন প্রজন্মকে মুসলিম ও বাঙালি সভ্যতা, সংস্কৃতি থেকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে।

এই বিশ্ব-ভালবাসা দিবসটিকে এতো মোহনীয় করে উপস্থাপন করেছে যে, এই বিশ্ব-ভালবাসা দিবসে অনেক রক্ষনশীল পরিবারের সন্তানেরাও এই দিনে নিয়ন্ত্রন হারা হয়ে যায়।আবার অনেকেই জেনে বুঝেও বাণিজ্যিক কারণে এই বিশ্ব-ভালবাসা দিবসটিকে নিয়ে অনেক আয়োজন করে থাকে।তারা ১৪ই ফেব্রুয়ারীর কয়েকদিন আগে থেকেই বিশেষ আয়োজনের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করে।এই দিবসটিকে কেন্দ্রকরে বিভিন্ন কোম্পানী এ দিবস উপলক্ষে নানা অফার দিয়ে তরুন-তরুনীদের আকর্ষন করে থাকে।আবার বড় বড় হোটেল ‍গুলোর হল রুমে তরুন-তরুনীদের মিলন মেলা অনুষ্টিত হয়ে থাকে।নানান রংঙের বেলুন, ফুল ইত্যাদি দিয়ে হলরুমের অভ্যন্তরকে বাসরঘরের মত করে সাজানো হয়।অনুষ্টানের শুরুতে থাকে মনকে মাতাল করে দেওয়ার জন্য লাইভ ব্যান্ড এবং অশ্লীল নাচ।এখানে তরুন-তরুনী, যুবক-যুবতী থেকে শুরু করে বয়স্ক পর্যন্ত নিমন্ত্রন করা লোকজনদের মধ্যে বেশির ভাগ লোকই এই নাচে অংশ নেন।এই ভাবেই নাচতে নাচতেই সব হারিয়ে আমাদের যুব সমাজ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।

বেহায়া দিবস রোধে আমাদের করণীয়ঃ

তাই আমাদের সকলকে সভ্যতা, সংস্কৃতি, মনুষত্ব ও সমাজকে এই ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে উদ্যোগ নিতে হবে এবং সচেতন হতে হবে প্রত্যেক অভিভাবকদের। সেই সাথে সরকার ও প্রশাসনকে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করে তা বাস্তবায়ন করতে হবে এই বেহায়াপনা ও বাণিজ্য বন্ধের। আমাদের সকলের উচিৎ কঠিন ভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহন করা।

এই আর্টিকেল বা অন্য যেকোন বিষয়ে আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে তাৎক্ষনিক উত্তর পেতে আমাদের আপডেট খবর ফোরামে ভিজিট করে প্রশ্ন করুন। Forum: http://updatekhobor.com/forum

Show More

Related Articles

Back to top button
ব্রেকিং নিউজ