
মৃত সাগরে সাঁতার -:- পৃথিবীতে এমন একটি সাগর রয়েছে যেখানে ভেসে থাকতে সাঁতার কাটার প্রয়োজন নেই।ডেড সি বা মৃত সাগরে আপনি সাঁতার না জেনেও অনায়াসে ভেসে থাকতে পারবেন। প্রকৃতির এই অসাধারন সৃষ্টি ডেড সি বা মৃত সাগর নামে পরিচিত হলেও, এটি মূলতঃ একটি হ্রদ।হ্রদটির অবস্থান জর্ডান এবং ফিলিস্তিনের মাঝামাঝি।
মৃত সাগরটি ইসরাইলের দখলে:
ফিলিস্তিনের অংশটি বর্তমানে ইসরাইলেন দখলে।এটি পৃথিবীর সবচেয়ে নিচু জায়গা হিসেবে বিখ্যাত।ফলে, বর্তমানে হ্রদটি সমুদ্রপৃষ্ঠের ৪২০ মিটার নিচে অবস্থিত।
পাশাপাশি, এটি সবচেয়ে লবনাক্ত হ্রদগুলোরও একটি।সাগরে পানির তুলানায় এখানকার পানির লবনাক্ততা প্রায় ৯ গুন বেশি।ফলে হ্রদটির পানি আপনার কাছে পানির বদলে অলিভ ওয়েল মনে হতে পারে।পানির ঘনত্ব আপনার দেহে ঘনত্বের চেয়েও বেশি হওয়ায় সাঁতার না জেনেও মৃত সাগরে নির্ভয়ে নেমে যেতে পারবেন।
৬০৫ বর্গ কিলোমিটারের এই হ্রদে কোন জেলে নৌকা খুঁজে পাওয়া যাবে না।কারন,এখানে কোন মাছ নেই।অত্যধিক মাত্রায় লবন মাছের জন্য হ্রদটিকে মৃত্যুকূপে পরিণত করেছে।কিন্তু, কিছু ক্ষেত্রে হ্রদটির বিশেষ উপকারিতা রয়েছে।
মৃত সাগরে সাঁতার -:- মিশরের রানী ক্লিওপেট্রার রূপের রহস্য:
কথিত আছে, প্রাচীন মিশরের রানী ক্লিওপেট্রার রূপের রহস্য ছিল মৃত সাগরের কাদামাটি।হ্যাঁ, এখানকার পানি খনিজ লবন ত্বকের জন্য বিশেষ উপকারী।এখানকার কাদা গায়ে মাখলে ত্বক অপেক্ষাকৃত বেশি উজ্জ্বল এবং মসৃন হয়ে ওঠে।ফলে, মৃত সাগরের কাদা গায়ে মাখতে দেশ দেশান্তর থেকে পর্যটকরা ছু্টে আসেন এখানে।এ যেন মরুভূমির বুকে এক প্রাকৃতিক স্পা।

এখানে সূর্য স্নান করলে চামড়া পুড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।সবচেয়ে নিচু স্থান হওয়ার সূর্য রশ্মির এখানে পৌঁছাতে বেশি পরিমাণ বায়ু ভেদ করতে হয়।ফলে, ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মির পরিমাণ একেবারেই কম।কিন্তু, ভুলেও এখানকার পানি পান করার চিন্তা করবেন না।কারণ, এতে আপনার বমি হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।অসাধারন এই জায়গাটির এক করুন পরিণিতি হতে চলেছে।মৃত সাগরের আয়তন ত্রুমাগত কমছে।বর্তমানে প্রতিবছর হ্রদটির পৃষ্ঠ প্রায় ১ মিটার করে অবনমিত হচ্ছে। এর পেছনে রয়েছে বেশ কয়েকটি কারণ।
মৃত সাগর অবনমিত হওয়ার প্রথমত ধারণা:
কিছু কোম্পানি এখান থেকে বিপুল পরিমাণ পানি নিষ্কাশন করছে।আহরণ করছে বিপুল পরিমাণ খনিজ পদার্থ।এসব খনিজ পদার্থ ব্যবহৃত হচ্ছে বিভিন্ন সৌন্দর্যবর্ধক পণ্যে।আবার,জর্দান নদীর পানি প্রাকৃতিকভাবে মুত সাগরের দিকে প্রবাহিত হয়।কিন্তু, বর্তমানে নদীটির পানি প্রবাহিত করা হচ্ছে বিভিন্ন শহরের দিকে।বিশ্বের বিভিন্ন মিডিয়ায় খবর রটেছে,মৃত সাগর মরছে।
এই আর্টিকেল বা অন্য যেকোন বিষয়ে আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে তাৎক্ষনিক উত্তর পেতে আমাদের আপডেট খবর ফোরামে ভিজিট করে প্রশ্ন করুন। Forum: http://updatekhobor.com/forum
মৃত সাগরে সাঁতার সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা বলছেন:
মৃত সাগর একেবারে শুকিয়ে যাওয়ার তেমন কোন সম্ভাবনা নেই।কারণ, পানির স্তর নামার সাথে সাথে হ্রদটির পানির ঘনত্বও বেড়ে যাচ্ছে।ফলে কমছে বাষ্পীভবনের হার।ভবিষ্যতে হ্রদটি হয়তো খুব ছোট আকার ধারন করবে, কিন্তু একেবারে শুকিয়ে যাবার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
এই সাগরটি পৃথিবীর সবচেয়ে অনন্য স্থানগুলোর একটি।হাজার হাজার বছর ধরে মানুষ হ্রদটির বৈশিষ্ট্যে বিস্মিত হয়ে এসেছে, রচিত হয়েছে গল্প, উপন্যাস আর লোককথা।যথাযথ উদ্যোগে হ্রদটি আবারও তার পূর্ণ যৌবন ফিরে পাবে, এটাই প্রত্যাশা।