রাসূল (সাঃ) এর লাশ চুরির লোমহর্ষক ঘটনা!

রাসূল (সাঃ) এর লাশ চুরি-:- দীর্ঘ তিন বছর মাটি খুঁড়ে সুড়ঙ্গ করে রাসূল (সাঃ) এর কবর পর্যন্ত পৌছে গিয়েছিলো দুইজন ইয়াহুদী। এবং আল্লাহর রাসূলের লাশ চুরি করার পূর্বে রাসূল (সাঃ) তৎকালীন রাজাকে স্বপ্নে এসে বললেন, হে নুরুদ্দিন আমাকে দুজন লাল চক্ষু বিশিষ্ট ব্যক্তি বিরক্ত করছে। এদের হাত থেকে আমাকে রক্ষা করো।
প্রিয় দর্শক হিজরী ৫৫৭ সালে ইয়াহুদীরা চক্রান্ত করে রাসূল (সাঃ) এর লাশ চুরি করতে নিয়েছিল মদিনা থেকে। অতঃপর অলৌকিকভাবে তারা কিভাবে ধরা খেয়েছিলো এবং তাদের কি পরিণতি হয়েছিল।
রাসূল (সাঃ) লাশ চুরি ‘র বিস্তারিতঃ
৫৫৭ হিজরীতে তৎকালীন সুলতান নুরুদ্দীন জঙ্গী (রহঃ) তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে নামাজের বিছানায় ঘুমিয়ে পড়ে ছিলেন। এমতাবস্থায় হঠাৎ তিনি স্বপ্নে দেখলেন, রাসূল (সাঃ) তার ঘরে উপস্থিত এবং আল্লাহর রাসূল কোনো ভুমিকা ছাড়াই দুইজন নীল চক্ষুবিশিষ্ট লোকের দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, ইয়া নুর উদ্দিন এরা আমাকে বিরক্ত করছে।এই দুইজন থেকে আমাকে মুক্ত করো।
এই ভয়াবহ স্বপ্ন দেখে নুরুদ্দিন জঙ্গী (রহঃ) অত্যন্ত ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে ঘুম থেকে জাগ্রত হলেন এবং কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেলেন। ভাবলেন এটি হয়তো কোন দুঃস্বপ্ন।তাৎক্ষণিক তার মাথায় বিভিন্ন প্রকার চিন্তা ঘুরপাক খেতে লাগল। তিনি ভাবলেন, আল্লাহর রাসূল (সাঃ) তো এখন কবরের জীবনে, তার সাথে অভিশপ্ত ইহুদিরা এমন কি ষড়যন্ত্র করতে পারে?
অতঃপর একই স্বপ্ন তিনি বেশ কয়েকবার দেখলেন। কালবিলম্ব না করে ১৬ হাজার অশ্বারোহী সৈন্য নিয়ে তিনি মদিনার দিকে রওনা দিলেন। সেই দুইজন ভয়ংকর নীলচক্ষু বিশিষ্ট ব্যক্তিকে মদিনার অলিতে গলিতে খুঁজতে লাগলেন।

কিন্তু তার সৈন্য বাহিনী দীর্ঘ দুই সপ্তাহ ধরে খোঁজার পরেও মদিনাতে সেই দুইজন ব্যক্তিকে খুঁজে পেলোনা। যাদের ব্যাপারে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) সতর্ক করেছেন। এরপর ১৭ তম দিনে তিনি মদীনার চারপাশ সৈন্যবাহিনী দ্বারা ঘেরাও করে ফেললেন। এবং আদেশ জারি করে দিলেন। যারা মদিনার বাইরে আছে তারা ভিতরে আসতে পারবে। কিন্তু মদিনা থেকে কোনো লোক বাহিরে যেতে পারবে না।
নুরুদ্দিন জঙ্গী (রহঃ) জুমার খুতবা প্রদান করলেন। ঘোষণা দিলেন, আমি মদিনার মানুষকে দাওয়াত দিয়ে একবেলা খাওয়াতে চাই। আমার অভিলাশ সকলেই যেন এই দাওয়াতে অংশগ্রহন করে। এটিই সুলতান আদেশ করেছিল। সুলতান মদিনাবাসী কে আপ্যায়নের জন্য বিশাল আয়োজন করলেন। নির্ধারিত সময়ে খাওয়া-দাওয়ার ব্যাবস্থা করলেন। এবং তৃপ্তিসহকারে মদিনার অলিগলির সকল মানুষ এসে খেলেন। কিন্তু সেই নীল চক্ষুবিশিষ্ট দুজন ব্যক্তিকে খোঁজে পাওয়া গেলো না।
এরপর তিনি বিশ্বস্ত বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করলেন, আচ্ছা আর কেউ কি অবশিষ্ট আছে। যারা এখনো আমার আতিথিয়েতা গ্রহণ করেনি। এই শুনে লক্ষাধিক জনতার মধ্যে এক ব্যক্তি হঠাৎ করে বলে উঠলেন, হুজুর আমার জনামতে সম্ভবত দুইজন লোক এখনো বাকি আছে, যারা আল্লাহ ওয়ালা বুজুর্গ মানুষ। লোকটির বক্তব্য শুনে তিনি কালবিলম্ব না করে কয়েকজন লোক সহকারে ওই ২ জন লোকের আবাসস্থলে পৌঁছে গেলেন। এবং নুরুদ্দিন জঙ্গি (রহঃ) ওই দুইজন লোককে দেখে প্রচন্ড চমকে উঠলেন। কারণ এরাই তো সেই দুইজন ব্যক্তি যাদেরকে স্বপ্নে দেখানো হয়েছিল।
রাসূল (সাঃ) লাশ চুরি ‘র লোকদের দাওয়াতঃ

তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, কে তোমরা? কোথা থেকে এসেছো? তোমরা সুলতানের দাওয়াতে কেন শরিক হলে না? লোক দুটো তাদের পরিচয় গোপন করে বলল, আমরা মুসাফির হজের উদ্দেশ্যে এসেছিলাম। কিন্তু প্রিয় নবী (সাঃ) এর প্রেমে আত্মহারা হয়ে আর ফিরে যেতে মন চাইল না, তাই বাকি জীবন রওজার পাশে কাটিয়ে দেওয়ার নিয়তে এখানে রয়েগেছি। উপস্থিত জনগণ তাদের পক্ষ হয়ে বলল, হুজুর এরা খুবই আল্লাহ ওয়ালা মানুষ। সারাদিন এবাদত বন্দেগী করে। এরপর সুলতান কারো কথায় কান না দিয়ে তাদেরকে সেখানে আটকে রাখার দির্দেশ দিলেন।
অতঃপর সুলতান নিজে তাদের থাকার জায়গায় গিয়ে খুব ভালো করে অনুসন্ধান চালালেন। কিন্তু সেই স্বপ্নের সাথে সম্পর্কিত কোনোকিছু সেখানে পাওয়া গেল না। এখনো রহস্য উদঘাটন করতে না পারায় তিনি সীমাহীন চিন্তিত হয়ে পড়লেন। একপরযায়ে নুরুদ্দিন জঙ্গি (রহঃ) সেই ঘরের ভিতরে তার সঙ্গীদের বললেন, আচ্ছা তাদের নামাজের মুসল্লাটি একটু উঠাও তো-
সঙ্গীরা নির্দেশ পালন করল। নামাজের মুসল্লাটি বিছানো ছিল একটি চাটাইয়ের উপর। সুলতান আবারো নির্দেশ দিলেন। চাটাই টিও সরিয়ে ফেলো। তারপর চাটাই সরানোর পর দেখা গেল সেখানে বিশাল পাথর। সুলতানের নির্দেশে সেই পাথরটিও সরানো হলো। এবার পাওয়া গেল একটি সুরঙ্গ পথ, যা ধীরে ধীরে নবীজির রওজা মোবারক পরযন্ত মাটির নিচ দিয়ে পৌঁছে গেছে। এই দৃশ্য অবলোকন করা মাত্র নুরুদ্দিন জঙ্গি বিজলির নেয় চমকে উছলেন!
অতঃপর লোক দুটো কে লক্ষ্য করে।ক্ষিপ্ত সিংহের ন্যায় ঝাঁঝালো কন্ঠে গর্জন করে বললেন। তোমরা সত্যি কথা খুলে বলো, নইলে এক্ষুনি তোমাদের মাথা থেকে গর্দান সরিয়ে দেব। বলো তোমরা কে? তোমাদের আসল পরিচয় কি? কেন এখানে এসেছ? সুলতানের কথায় তারা অত্যন্ত ঘাবড়ে গেল। কঠিন বিপদ সামনে দেখে, তারা আসল পরিচয় প্রকাশ করলো। এবং বললো আমরা ইহুদি।
ইয়াহুদীদের আস্তানা মুসল শহর থেকে আমাদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে এখানে পাঠানো হয়েছে।যাতে রাসূল (সাঃ) এর লাশ চুরি করে নিয়ে যেতে পারি। এবং তা যেন ইউরোপীয় ইয়াহুদিদের হাতে হস্তান্তর করি।এই কাজে সফল হলে, তারা আমাদেরকে আরো ধন-সম্পদ দিবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সুলতান বললেন তোমরা তোমাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য কি পদ্ধতি অবলম্বন করেছিলে? কিভাবে তোমরা কাজ করতে? তারা বললো আমাদের নিয়মিত কাজ ছিল রাত গভীর হলে অল্প পরিমাণ সরঙ্গ খনন করা।এবং সাথে ওই মাটিগুলো চামড়ার মজকে ভর্তি করে অতি সন্তর্পনে মদিনার বাহিরে ফেলে আসা।
আজ দীর্ঘ তিন বছর যাবত এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজে আমরা অনবরত ব্যস্ত আছি।ঠিক যে সময় আমরা রওজা মোবারকের নিকট পৌঁছে গেলাম মাটি খুঁড়তে খুঁড়তে আর একটু গেলেই।রোওজা মোবারকে পৌঁছে যাবো। রাসূল (সাঃ) এর লাশ আমাদের হাতে চলে আসবে, ঠিক সে সময় ধরে আমাদের মনে হল, আকাশ যেন ভেঙ্গে টুকরো টুকরো
রাসূল (সাঃ) লাশ চুরি ‘র লোকদের শাস্তিঃ
কাঠের মঞ্চ-Fire with woodহয়ে যাচ্ছে।জমিন যেন প্রচন্ড ভূমিকম্পে থর থর করে কাঁপছে। আমরা কোনোভাবে আর মাটি খুঁড়তে পারলাম না।দীর্ঘ একটি বছর মাটি খোঁড়া বন্ধ করে শুধু পরিকল্পনা করছি। কারণ গর্তে প্রবেশ করলেই ভূমিকম্প শুরু হয়ে যায়।
তাদের বক্তব্য শুনে সুলতান এর চোখ দিয়ে পানি পড়তে থাকলো এবং তার কাছে সবকিছু পরিষ্কার হয়ে গেলো।তিনি সেই দুই ইয়াহুদীকে নজিরবিহীন শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করলেন। একটি বিশাল ময়দানে ২০ হাত উঁচু একটি কাঠের মঞ্চ তৈরি করলেন। নির্ধারিত সময়ে লক্ষ লক্ষ লোক উক্ত মাঠে সমাবিত হলো।সুলতান নুরুদ্দীন জঙ্গী (রহঃ) অপরাধী লোক দুটোকে লোহার শিকল ধারা আবদ্ধ করে মঞ্চের উপর বসালেন।
তিনি লোকজনদের বিপুল পরিমাণে লাকড়ি সংগ্রহের আদেশ দিলেন। তারপর লক্ষ জনতার সামনে সেই ইয়াহুদি লোক দুটোকে মঞ্চের নিম্নভাগে আগুন লাগিয়ে পুরো ভস্ম করে দিলেন।কোন কোন বর্ণনায় আছে সেই আগুন নাকি দীর্ঘ ১১ দিন পর্যন্ত জ্বলছিল।
অতঃপড় বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে। ১ হাজার মণ সিষা গলিয়ে বাসূল (সাঃ) এর রওজা শরীফের চারিপাশে মজবুত প্রাচীর নির্মাণ করে দেন।
এই আর্টিকেল বা অন্য যেকোন বিষয়ে আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে তাৎক্ষনিক উত্তর পেতে আমাদের আপডেট খবর ফোরামে ভিজিট করে প্রশ্ন করে তাৎক্ষনিক উত্তর জেনে নিন: http://updatekhobor.com/forum
যেন ভবিষ্যতে আর কোনো ইয়াহুদী চক্রান্ত করে নবীজির লাশ চুরি করার দুঃসাহস না দেখাতে পারে।এরপর তিনি রাব্বুল আলামিনের দরবারে শুকরিয়া আদায় করলেন।এবং তাকে রাব্বুল আলামিন এত বড় খেদমতের জন্য কবুল করায় তিনি সপ্তাহব্যাপী আনন্দ অশ্রু বিসর্জন দিয়ে মুনাজাত এবং সেজদায় পড়ে রইলেন।
ইতিহাস থেকে পাওয়া যায় যে নুরুদ্দিন জঙ্গী (রহঃ) ইন্তেকাল এরপর অসিয়ত মোতাবেক তার লাশকে রাসূল (সাঃ) এর রওজা মোবারকের কাছাকাছি দাফন করা হয়।