অন্যান্যপরিবেশবিজ্ঞান ও প্রকৌশলবিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

সৌদির নিওম সিটি দূষণমুক্ত স্বর্গীয় নগরী

সৌদির নিওম সিটি দূষণমুক্ত স্বর্গীয় নগরী -:- গত জানুয়ারি মাসে সৌদি ক্রাউন পিন্স মোহাম্মদ বিন-সালমান নিওম… নামক এক অত্যাধুনিক নগরীর ঘোষণা দেন। সম্পূর্ণ নতুন ধরণের এই নগরী হবে ১৭০ কিলোমিটার লম্বা এবং এখানে বসবাস করতে পারবে কয়েক মিলিয়ন মানুষ।

সৌদির নিওম সিটি, এখানে কোন গাড়ি বা রাস্তা থাকবে না, থাকবে না কোন বায়ূ দূষণ বা কার্বণ নিঃসরণ। কিন্তু এ ধরণের বৃহৎ সিটিকে সচল রাখতে প্রচুর পরিমান পানির প্রয়োজন। এবং শহরটি গড়ে উঠতে যাচ্ছে পৃথিবীর অন্যতম শুষ্ক অঞ্চলে। বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাব মারাত্মক হয়ে ওঠার সাথে মধ্যে-প্রাচ্যে পানির অভাব ক্রমাগত তীব্র আকার ধারণ করছে। পানির অভাব মোকাবেলায় মধ্যে-প্রাচ্যের দেশ সমূহ অনেক আগে থেকেই ডি-স্যালিনেশন প্লান্টের উপর নির্ভরশীল।

সৌদি ক্রাউন পিন্স মোহাম্মদ বিন-সালমান
সৌদি ক্রাউন পিন্স মোহাম্মদ বিন-সালমান

ডি-স্যালিনেশন প্লান্টের কার্যপ্রনালী খুবই সাধারণ প্রথমে সাগর থেকে পানি সংগ্রহ করা হয়, অতঃপর লবণাক্ত পানি থেকে লবণ পৃথক করে সুপেয় পানি বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়। বর্তমানে, ১৭৩ টি দেশের ৩০ কোটিরও বেশি মানুষ পানির জন্য এ প্রযুক্তিটির উপর নির্ভশীল সৌদি আরব পৃথিবীর সর্ববৃহৎ নদী বিহীন দেশ। ফলে, সৌদি আরবের প্রায় সম্পূর্ণ পানির যোগান আসে ডি-স্যালিনেশন প্লান্ট থেকেই। ডি-স্যালিনেশনের দুটি পদ্ধতি রয়েছে। যথাক্রমে-থার্মাল ডি-স্যালিনেশন এবং রিভার্স অসমোসিস। থার্মাল ডি-স্যালিনেশন পদ্ধতিতে লবণাক্ত পানি উত্তপ্ত করে বাষ্প আকারে সুপেয় পানি আলাদা করে নেয়া হয়।রিভার্স অসমোসিস পদ্ধতিটি বেশ জটিল এবং খরচ অপেক্ষাকৃত কম। এ পদ্ধতিতে লবণাক্ত পানি চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে একটি অর্ধ-ভেদ্য পর্দার মধ্য দিয়ে চালনা করে পানি থেকে লবণ পৃথক করা হয়।

ডি-স্যালিনেশন প্লান্টের কার্যপ্রনালী
ডি-স্যালিনেশন প্লান্টের কার্যপ্রনালী

থার্মাল ডি-স্যালিনেশনের তুলনায় এ পদ্ধতিতে বিদুৎ শক্তি বেশ কম প্রয়োজন। দুটি পদ্ধতিই বেশ ব্যয়-বহুল এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশ গুলোকে এক্ষেত্রে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হয়।

আবার, বিশ্ব ব্যাপী ডি-স্যালিনেশন প্লান্টগুলো প্রতি বছর ৭ কোটি ৬০ লাখ টন কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন করে। আগামী ২ যুগে এই পরিমাণ অন্তত ৩ গুন বৃদ্ধি পাবে।কিন্তু, নিওমসিটি এক্ষেত্রে এক বিরাট পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে। শহরটিতে পানি সরবরাহের জন্য নিমির্ত হবে সোলার ডোম নামক এক অসাধারণ গম্বুজ আকৃতির স্থাপনা। কাঁচ এবং ইস্পাত নিমির্ত গম্বুজটি ২৫ মিটার উচুঁ সাগর থেকে লবণাক্ত পানি গম্বুজটিতে

সরবরাহ করা হবে। ঘিরে থাকা কয়েকশ আয়না সূর্য্যের তাপ গম্বুজটিতে কেন্দ্রীভূত করে উত্তপ্ত করে তুলবে। যা গম্বুজে থাকা পানিকে বাষ্পীভূত করবে। পরবর্তীতে বাষ্প ঘনীভূত হয়ে পানি আকারে বেরিয়ে আসবে।

একটি সোলারডোম প্রতি ঘন্টায় ৩ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করতে সক্ষম। যেখানে প্রতি লিটার পানির জন্য খরব হবে মাত্র ২৯ পয়সা। প্রযুক্তিটি মূলত থার্মাল ডি-স্যালিনেশনের নবায়নযোগ্য সংস্করণ। কিন্তু, এক্ষেত্রে কার্বন নির্গমন একে বারে শুন্য। বিশ্ব ব্যাপী পানীয়-জলের অভাবে থাকা দেশ গুলোর জন্য ইতিমধ্যে নিওম আশার প্রদীপ হয়ে উঠেছে।যদি নিওম সিটি সাফল্যের মুখ দেখে এবং সোলারডোম প্রযুক্তিটি কার্যকরী হয়ে উঠতে পারে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষের জন্য স্বল্প খরচে টেকসই সুপেয় পানির উৎস নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। সেই সাথে পরিবেশ ও জীবজগৎ মুক্তি পাবে কোটি কোটি টন কার্বন নিঃসরণের হাত থেকে।

কার্বন নির্গমন শুন্য
কার্বন নির্গমন শুন্য

এই আর্টিকেল বা অন্য যেকোন বিষয়ে আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে তাৎক্ষনিক উত্তর পেতে আমাদের আপডেট খবর ফোরামে ভিজিট করে প্রশ্ন করে তাৎক্ষনিক উত্তর জেনে নিনhttp://updatekhobor.com/forum

Show More

Related Articles

Back to top button
ব্রেকিং নিউজ